নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি, ১৬ জুলাই:বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে করোনা আক্রান্ত হয়ে চারজনের মৃত্যু হলো। এদের মধ্যে দিশান কোভিড হাসপাতালে ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রিকু ওয়ার্ডে একজন করে করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। বাকি দু’জনের মৃত্যু হয়েছে শিলিগুড়ির প্রধাননগরের একটি নার্সিংহোমে। নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে এই দুজনের মধ্যে একজন বিহারের কিশানগঞ্জের বাসিন্দা, আর এক জন শিলিগুড়ি শহরের খালপাড়ার। বাকি দু’জনের একজন শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া কার্শিয়াং মহকুমার সুকনা এবং জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্গত শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া শান্তিনগরের বাসিন্দা।
গত ২৪ ঘণ্টায় দার্জিলিং জেলায় মোট ১১০ জন নতুন আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান মিলেছে। সেই সঙ্গে এদিন চারজনের মৃত্যুতে শিলিগুড়িতে করোনা পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। ১১০ জন আক্রান্তের মধ্যে ৭৯ জন শিলিগুড়ি পুরসভা এলাকার বাসিন্দা।
শহরে করোনার এই ব্যাপক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্যেই এদিন সকাল ন’টা থেকে পুরসভার ৪৭ টি ওয়ার্ডে শুরু হয়েছে লকডাউন। সাত দিনের এই লকডাউন প্রথম থেকেই কড়াকড়ি ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গোটা শহরে ছুটে বেড়িয়েছে পুলিশ। লকডাউন নিয়ে শহরের একটি অংশের মানুষের অসচেতনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখে প্রশ্ন উঠেছে, উদ্ভুত করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সত্যিই কি শহরের সবাই আতঙ্কিত, না কি কিছু মানুষ বিপর্যয় ডেকে আনার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন?
আনরক শুরু হওয়ার পর এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার কিছুদিনের মধ্যেই গোটা উত্তরবঙ্গে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। শিলিগুড়িতে সংক্রমণ ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় করোনা আক্রান্তের সন্ধান মেলায় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক সাধারণ মানুষ গোটা শহরকে লকডাউনের আওতায় আনার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনও প্রশাসনের কাছে সরাসরি দরবার করেছিল করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে শিলিগুড়ি শহর জুড়ে লকডাউন লাগু করা হোক।
বিভিন্ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রশাসন প্রথমদিকে সংক্রমিত এলাকার অবস্থা বিচার করে কিছু এলাকাকে চিহ্নিত করে কড়াকড়ি লকডাউন শুরু করেছিল। সেই সঙ্গে শহরের বড় বড় জনবহুল বাজারগুলি বন্ধ রেখে জনসাধারণের অবাধ মেলামেশা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নিয়েছিল প্রশাসন।
কিন্তু তার পরেও শহরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। যা প্রশাসন তো বটেই, সাধারণ মানুষকেও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এদিন শহরে সাত দিনের জন্য লকডাউন শুরু হওয়ায় অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
কিন্তু এদিন সকাল থেকেই যেভাবে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বহু মানুষকে অকারণে রাস্তায় বের হতে দেখা গিয়েছে তাতে ওয়াকিবহাল মহল প্রমাদ গুনেছেন। সকলেরই বক্তব্য করোনা সংক্রমিত পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তা দেখার পরও যদি কিছু মানুষ লকডাউনকে উপেক্ষা করেন তাহলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেবে।
এদিন বহু মানুষ নানা অছিলায় অকারণে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তাদের ধরে ধরে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কোথাও ধাওয়া করতে হয়েছে পুলিশকে এ ধরনের মানুষকে ঘরে ফেরাতে, আবার কোথাও এ ধরনের বেপরোয়া মানুষকে গ্রেফতার করতে হয়েছে। আর এই কাজের জন্য এদিন শিলিগুড়ি জংশন থেকে শুরু করে এয়ারভিউ মোড়, হাসমিচক, সেবক মোড়, মহাবীরস্থান, এনজেপি; গোটা শহর ছুটে বেড়িয়েছে পুলিশ। তাতে প্রশ্ন উঠেছে, বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য মানুষের পিছনে কেন পুলিশকে ছুটতে হবে। নিজের ভালোটা বোঝার শক্তিও কি মানুষের মধ্যে লোপ পেয়েছে?